কম্পিউটারের ইতিহাস (History of Computer):
কম্পিউটার একটি গণক যন্ত্র। গণনার ইতিহাস চর্চা করে আমরা জানতে পারি সেই প্রস্তরযুগে নুড়ি ও পাথরের সাহায্যে গুহার গায়ে আঁক কেটে মানুষ প্রথম গণনার কাজ শুরু করে। সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে এল যন্ত্র।
Abacus: আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার
বছর পূর্বে চীন দেশে প্রথম অ্যাবাকাস (Abacus) নামক যন্ত্রটি আবিষ্কৃত হয়।
অ্যাবাকাস কথাটির উৎপত্তি গ্রীক শব্দ “Abakos” থেকে। এটি একটি সরলযন্ত্র। কাঠ বা ধাতুর ফ্রেমের ভিতর কয়েক সারি তার থাকে। এই
তারের মধ্যে কিছু সংখ্যক পুঁথি বর্তমান। এই পুঁথিগুলিকে হাতের সাহায্যে উপরে উঠিয়ে
বা নিচে নামিয়ে সাধারন যোগ বিয়োগ ইত্যাদি গণনা করা হত। পরে বিভিন্ন দেশে
অ্যাবাকাসের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। জাপানের যে ধরনের অ্যাবাকাস যন্ত্রের ব্যবহার হয়
তার নাম “সরোব্যান”
অ্যাবাকাস (Abacus) |
Napier's Bone: সপ্তদশ শতকের পুরোভাগে 1617 খ্রিষ্টাব্দে স্কটিশ গনিতজ্ঞ জন নেপিয়ার (John Napier) একটি যন্ত্র আবিস্কার করেন যে যন্ত্রটি নেপিয়ারের হাড় বা "নেপিয়ারস বোন" (Napier's Bone) নামে পরিচিত। নেপিয়ারস বোন যন্ত্রটি ছিল হাতির দাঁতের তৈরি একটি রড (Rod)। নেপিয়ারস বোন যন্ত্রটিতে 10টি রেখাঙ্কিত দণ্ড আছে। এই যন্ত্রের সাহায্যে যোগ, বিয়োগ ছাড়া
ও 2 টি বড় সংখ্যার গুন ও করা যেত। এছাড়াও যন্ত্রটির সাহায্যে লগারিদম ও অ্যান্টি লগারিদম -এর ধারনা করা যায়।
Pascals Calculator: পরবর্তী কালে 1642 সালে বিখ্যাত ফরাসী গণিতবিদ ব্লেস পাস্কাল ছোট কিছু চাকার সাহায্যে যে উন্নতমানের গণক যন্ত্রটিকেই পাস্কালিন যন্ত্র (Pascals Calculator) নামে অভিহিত করা হয়। এতিকেই প্রথম ক্যালকুলেটর নামে আখ্যা দেওয়া হয়।
Stepped Reckoner: 1671 সালে জার্মান গণিতজ্ঞ গডফ্রে লিবনিজ পাস্কালের যন্ত্রগণকটির ব্যাপক উন্নতি সাধন করে যে যন্ত্রটি আবিস্কার করেন তাকে লিবনিজের "স্টেপড রেকনার" (Stepped Rechoner) আখ্যা দেওয়া হয়। এই যন্ত্রের সাহায্যে যোগ, বিয়ো
গ, গুন, ভাগ ও বর্গমূল করা যায়।Stepped Reckoner |
Analytical Engine: 1833 খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজই প্রথম একটি স্বয়ংক্রিয় গণক যন্ত্রের পরিকল্পনা করেন - তার এই পরিকল্পিত যন্ত্রের সাহায্যে সাধারন যোগ, বিয়োগ, গুন ও ভাগ ছাড়া শতকরা ও বর্গমূলের হিসাব করা যায়। এর নাম দেওয়া হয় অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন। এই যন্ত্রের নক্সায় মুল চারটি অংশ আমরা দেখতে পাই। এই অংশগুলি হল - (ক) মিল (Mill), (খ) স্টোর (Store), (গ) অপারেটর (Operator), (ঘ) ডিভাইস (Device)।
সেই সময় বিজ্ঞান প্রযুক্তির উন্নতির না থাকার ফলে তিনি তার এই চিন্তাকে বাস্তবায়িত করে যেতে পারেন নি। কিন্তু পরবর্তী কালে বৈজ্ঞানিকগন তাঁর এই প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়িক করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর সেই চিন্তাভাবনার ফল হিসাবে বর্তমানে কম্পিউটারগুলিতে স্মৃতি ভাণ্ডার (Memory) এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ব্যাবেজের সেই চিন্তা ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক কম্পিউটারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ব্যাবেজের এই যুগান্তকারী চিন্তা-ভাবনা এবং প্রচেষ্টার জন্য তাঁকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়।
Analytical Engine |
ব্যাবেজের ধারনা অনুসারে একটি কম্পিউটারের বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যঃ
বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজের ধারনা অনুসারে যে কোনো যন্ত্রকে তখনই কম্পিউটার বলা যাবে যখন সেই যন্ত্রটির মধ্যে নিম্নলিখিত গুনগুলি পরিলক্ষিত হবেঃ
- যন্ত্রটিতে কোন কাজ করার আগে ও পরে তথ্যগুলি কোনো নির্দিষ্ট স্থানে সঞ্চিত থাকবে।
- যন্ত্রটিতে ইনপুট ইউনিট থাকবে, যার মাধ্যমে যন্ত্রটিতে কোনো তথ্য বা সংখ্যা প্রবেশ করানো যাবে।
- যন্ত্রটিতে আউটপুট ইউনিট থাকবে, যার মাধ্যমে যে কোনো ফলাফল প্রদর্শিত হবে।
- যন্ত্রটি যে কোনো রকম গণিতিক গণনা (যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ, বর্গমূল, শতকরা) এবং যুক্তিগত গণনা (Logical Calculation) করতে সক্ষম হবে।
চার্লস ব্যাবেজের পরবর্তীকালে 1890 সালে বিজ্ঞানী হারমান হলেরিথ আমেরিকার জন-গণনার কাজে একধরনের ছিদ্রযুক্ত কার্ড ব্যবহার করেন, যাকে পাঞ্চকার্ড অ্যাখ্যা দেওয়া হয়। এরপরে হলারিথের কোম্পানি IBM (International Business Machine) পাঞ্চকার্ডের ব্যাপক উন্নতি সাধন করে ট্যাবুলেটর (Tabulator) নামক যন্ত্রটি আবিষ্কার করে। পাঞ্চকার্ডের অক্ষরকে পরপর সাজিয়ে তোলার জন্য ট্যাবুলেটর এর পরবর্তীকালে সর্টার যন্ত্রটির আবিষ্কার হয়।
Nice post
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো
ReplyDelete