28 May, 2020

Computer Generation

কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রজন্ম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রের (Electronic Device) উন্নিতর সাথে সাথে কম্পিউটারেরও আদুনিকীকরণ শুরু হয়। এর ফলে কম্পিউটারের আকার থেকে শুরু করে কম্পিউটারের ভেতরের যন্ত্রাংশগুলির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত কম্পিউটারের বিশেষ ইলেকট্রনিক যন্ত্রংশগুলির উন্নিত ঘটিয়ে আজ আধুনিক কম্পিউটারের রূপ দেওয়া হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল কম্পিউটারের আকৃতি ক্রমসঃ ছোটো ও বহনযোগ্য করা, অধিক তথ্য সঞ্চয়  কাজের গতি বৃদ্ধি করা (High Speed)। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে কম্পিউটারকে এখনও  পর্যন্ত পাঁচটি প্রজন্মে (Generation) ভাগ করা যায়। 

প্রথম প্রজন্ম (First Generation) (1945-1955) 
 1945 থেকে 1955 পর্যন্ত যে সকল কম্পিউটার-এর ব্যবহার হত সেই সকল কম্পিউটারকে প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার আখ্যা দেওয়া হয়। এই প্রজন্মের কম্পিউটারগুলির প্রধান ইলেকট্রনিক যন্ত্র ছিল ভ্যাকুয়াম টিউব (Vacuum Tube)। ভ্যাকুয়াম টিউব যন্ত্রটি ছিল প্রচন্ড তাপ উৎপাদনকারী। এই প্রজন্মের কম্পিউটারের প্রধান অসুবিধাগুলি হল- আকৃতিতে এই চম্পুতেরগুলি ছিল বৃহৎ, কাজ করার গতি ছিল অত্যন্ত ধীর, তথ্যের ভিত্তিতে ফল প্রকাশের ক্ষমতা ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের, কোনো ক্ষেত্রে বিশ্বাসজগ্যতাহীন। ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহার করার ফলে যন্ত্রগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে তাপ উৎপন্ন হয়, ফলে কম্পিউটারগুলি চালানোর জন্য সীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা রাখতে হত।এছাড়া সেই যুগের কম্পিউটারগুলি ছিল অত্যন্ত দামি।
উদারণ- মেশিনঃ ENIAC, EDVAC, EDSAC, UNIVAC-I, MARK-I হল প্রথম
প্রজন্মের কম্পিউটারের উদাহরণ। 
ল্যাঙ্গুয়েজঃ বিভিন্ন লো-লুভেল ল্যাগুয়েজ, যেমন- মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ ও অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজ।
1st Generation Computer


দ্বিতীয় প্রজন্ম (Second Generation) (1956- 1964):
1947 খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম শাকলে William Shockley) ওয়াটার ব্রাটেন (Walter Brattain) ও জন বারডিন (John Bordin) ট্রানজিস্টার নামক একটি উন্নতি ইলেকট্রনিক যন্ত্র আবিস্কার করেন। কারিগরি বিজ্ঞানের এই উন্নতির ফলে ট্রানজিস্টারকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীকালে দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের উদ্ভাবন হয়। ট্রানজিস্টার নামক এই ইলেকট্রনিক যন্ত্রটি ভ্যাকুয়াম টিউবের তুলনায় আকারে ছোটো এবং অনেক বেশী বিশ্বাসযোগ্য, আনেক কম তাপ উৎপাদনকারী, অনেক কম বিদ্যুৎ গ্রহণ করে ও কাজের ক্ষেত্রে অনেক বেশী গতিশীল। তাই দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে ভ্যাকুয়াম টিউব-এর পরিবর্তে ট্রানজিস্টার ব্যবহার করা হত- ফলে দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে প্রথম প্রজন্মের তুলনায় যে সকল সুবিধাগুলি পাওয়া গেল সেগুলি হল- প্রথম প্রজন্মের তুলনায় আকারে ছোটো, অনেক বেশী বিশ্বস্ত, অনেক দ্রুত গতিতে ক্রিয়াশীল, অনেক কম বিদ্যুৎ শক্তি খরচ হত এবং কম তাপের উৎপত্তি হত। একই সঙ্গে কম্পিউটারের দাম অনেকটাই কমে গেল। তবে যে অসুবিধাগুলি দ্বিতীয় প্রজন্মেও বর্তমান থাকল সেগুলি- শীতাতপ নিয়ান্ত্রণের প্রয়োজন ও ক্রমাগত রক্ষাণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা। 
 উদাহরণ - মেসিনঃ IBM-1401, PDP-I, IBP-7000, IBM-1620, NCR-304 ইত্যাদি।
2nd Generation Computer

   
তৃতীয় প্রজন্ম (Third Generation) ( 1964 - 1975):
কম্পিউটারের বিবর্তনের পথে এর পরের ধাপ তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার। তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে সর্ব প্রথম ট্রানজিস্টারের পরিবর্তে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহৃত হল যা সিলিকনের টুকরোর ওপর তৈরি একটি ক্ষুদ্র তড়িৎবর্তনী। একটি আই-সি চিপ সাধারণত দৈর্ঘ্যে 16 থেকে 18 মিলিমিটার এবং প্রস্থে 6 থেকে 8 মিলিমিটার ও উচ্চতায় 2 থেকে 3 মিলিমিটার হয়। একটি আই-সি ট্রানজিস্টারের তুলনায় অনেক ছোট এবং এর বিদ্যুৎ গ্রহণ ক্ষমতা আরও কম হলেও অত্যন্ত দ্রুত কাজ করার ক্ষমতাসম্পন্ন ও অধিক বিশ্বস্ত। এই জেনারেশনে স্মল স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ও মিডিয়াম স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহার করা হয়। এর ফলস্বরূপ তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে যে সকল সুবিধাগুলি পাওয়া গেল সেগুলি হল - এই প্রজন্মের কম্পিউটার আকারে অনেক ছোট এবং বহনযোগ্য হল, আই-সি ব্যবহারের ফলে তাপ উৎপাদন অনেক কমে গেল, অর্থাৎ আগের দুই প্রজন্মের তুলনায় এই প্রজন্মের কম্পিউটার অনেক বেশি গতিশীল হল। কম্পিউটারগুলির কার্যক্ষমতা, নির্ভরশীলতা ও নির্ভুলতা বৃদ্ধি পেল এবং শীততাপ নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে গেল। এই প্রজন্মে যে সকল অসুবিধাগুলি থেকে গেল সেগুলি হল - কম্পিউটারের গঠন আরও জটিল হল, বিশেষ ক্ষেত্রে শীততাপ নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজনীয়তা এই প্রজন্মেও থেকে গেল।
উদাহরণঃ - মেশিনঃ IBM 360, IBM 370, ICL 2900, PDP II, CDC 1700 ইত্যাদি। 
     ল্যাঙ্গুয়েজঃ PASCAL ও উন্নত FORTRAN, উন্নত COBOL ইত্যাদি।
3rd Generation Computer


চতুর্থ প্রজন্ম (Fourth Generation) (1975 - 1984):
তৃতীয় প্রজন্মের শেষ ও চতুর্থ প্রজন্মের শুরুতেই আই-সি চিপের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। আই-সি-র পরিবর্তে লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীকালে ভেরি লার্জ স্কেল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট চিপ ব্যবহার করা হয়। সেটি আকারে ৫ বর্গ মিলিমিটার ও উচ্চতায় 2 থেকে 3 মিলিমিটার হলেও এর মধ্যে 33 হাজারের মত বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের সমন্বয় ঘটানো সম্ভব । এই প্রজন্মের কম্পিউটারে এই যন্ত্রটি প্রথম লাগানো হল। অন্য প্রজন্মগুলির তুলনায় এই প্রজন্মের সুবিধাগুলি হল - এই প্রজন্মের কম্পিউটার আরও দ্রুততর হল, শীততাপ নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজন এর থাকল না, বিদ্যুৎ শক্তির খরচ আরও কম হল, খুবই কম তাপের উৎপত্তি হয়। এই প্রজন্মের মুল অসুবিধাগুলি হল - কম্পিউটারের গঠন আরও জটিল হল, এই প্রজন্মের কম্পিউটারে যে সকল সফটওয়্যার ব্যবহৃত হত তা খুবই জটিল।
উদাহরনঃ মেশিনঃ DEC-10, STAR-1000, PRP-II, APPLE-II, IBM-4341
   ল্যাঙ্গুয়েজঃ C, C++, Word, Processing ও 4GL (SQL) ইত্যাদি।
4th Generation Computer


পঞ্চম প্রজন্ম (Fifth Generation) (1985 - .......)
চতুর্থ প্রজন্মের সঙ্গে পঞ্চম প্রজন্মের পার্থক্য খুব সামান্যই দেখা যায়। তবে এই প্রজন্মের কম্পিউটার খুবই দ্রুতগতি সম্পন্ন। চতুর্থ প্রজন্মের তুলনায় প্রসেসর, মেমোরি, তথ্য সঞ্চয় ইত্যাদিতে অনেক উন্নত। বৈজ্ঞানিকরা পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের আরও উন্নতি করার নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন । তাঁদের ধারনা অনুযায়ী ভবিষ্যতে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারে নলেজ ইনফরমেশন (KIPS) ব্যবহার করা হবে, ফলে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) থাকবে। তাই এই প্রজন্মের কম্পিউটার নিজে থেকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পারবে।
উদাহরণঃ ল্যাঙ্গুয়েজ - MS-OFFICE (Word, Excel, Power Point etc.), Java ইত্যাদি।
5th Generation Computer


ষষ্ঠ প্রজন্ম (Sixth Generation):
পঞ্চম ও ষষ্ঠ প্রজন্মের মধ্যে আলাদা করে বিভাজন যদিও সম্ভব নয় তবুও কিছু কিছু বৈজ্ঞানিকের ধারনা অনুযায়ী 2002 সাল থেকে কম্পিউটারের কিছু পরিবর্তন ও উন্নতি সাধিত হয় ( যেমনঃ RAM-এর সঞ্চয় ক্ষমতা বৃদ্ধি, হার্ড ডিস্ক -এর সঞ্চয় ক্ষমতা বৃদ্ধি, DVD-এর ব্যবহার, মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম -এর উন্নতি) একেই ষষ্ঠ প্রজন্ম বলা যেতে পারে।
6th Generation Computer

0 comments: